রেবা আফরাজ :
অদ্ভুত এক পৃথিবী দেখার সুযোগ আসলো। থেমে গেল সকল যুদ্ধ হানাহানি। কার কত ক্ষমতার দম্ভ, কে কতটা পরাক্রমশালী , ক্ষুদ্র এক ভাইরাস আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ” আবার তোরা মানুষ হ”। মৃত্যুর মিছিল দেখলাম আমরা। কী করুণ সেই মৃত্য! মানুষ হিসেবে আমরা আমাদের প্রিয়জনকে বিদায় দিয়েছি কোনো আয়োজন ছাড়া। অবরুদ্ধ আবেগ কেঁপে কেঁপে উঠেছে। কিন্ত, কিছুই করার নাই। মনোজগৎ এই রকম আয়োজনের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। ফলে সকল ঘটনা পরম্পরা ছিলো সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক আমাদের কাছে। এমন বিদায় তাই তীব্র বেদনার, সীমাহীন মনোকষ্টের।
কবে এই মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে, কবে আবার মানুষে মানুষে মিলনমেলা জমে উঠবে জানি না আমরা । শুধু জানি সমস্ত পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই মরণঘাতি অসুখের প্রতিষেধক আবিষ্কারে। খুব শীঘ্রই সুসংবাদ শুনবো বলে আশা করি। ১০০ বছর আগের বিজ্ঞান আর আজকের বিজ্ঞান এক নয়। আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি বিগত এক শতাব্দীতে। করোনার মত প্রাণঘাতী ভাইরাস মানুষের সৃজনশীল উদ্ভাবনী শক্তির কাছে একদিন পরাজিত হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। এই আমাদের বিশ্বাস।
করোনা বিদায় নেবে ঠিকই। কিন্তু, দীর্ঘ আর গভীরতর এক ক্ষত,দৃশ্যমান এক দাগ রেখে যাবে আমাদের অন্তরে। লেখা হবে সংলাপ, কাহিনী, কাব্য। ব্যথাতুর সে দীর্ঘ ইতিহাস।
অন্যরকম কিছু লেখার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু, কলমকে স্বাধীনতা দিলে যা হয়। সে তার ইচ্ছেমত চলে। বলতে চাচ্ছিলাম, করোনা নামক ক্ষুদ্র ভাইরাসটি অধিকাংশ মানুষকে( নির্দিষ্ট কিছু পেশাজীবি ছাড়া) হঠাৎ থামিয়ে দিয়ে যে অফুরান অবসরে ঠেলে দিলো — এই সময়টিকে কে কীভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আত্মউপলব্ধির এ এক চমৎকার সুযোগ। নিজেকে খুঁটিয়ে দেখা। এমনকি আস্ত এই জীবনটাকে। বহুবার মনে হয়েছে আত্মজীবনী লিখি। আরও আগে মনে হতো, আত্মজীবনী লিখবার জন্য একটা বয়সের গন্ডি পার হওয়া দরকার। আরও কিছু অর্জন। এই বেলায় এসে মনে হলো, ব্যর্থ মানুষেরও আত্মজীবনী হতে পারে। ছোটবেলায় একটি নদীর আত্মকাহিনী, বট গাছের আত্মকথা পড়তে পড়তে মনটা কেমন ভারী হয়ে উঠতো। একজন লেখক তার অভিজ্ঞতা আর দর্শনের বাইরে যেতে পারে না। ঘুরে ফিরে সে অর্জিত অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগায়।
জীবন আসলে অমিত এক সম্ভাবনার নাম। জীবনের বহুবিধ অনাকাঙ্খিত ঘটনা, লড়াই, আশা ভঙ্গ,শত্রুতা সব কিছুর সংগে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। একান্ত অনুভূতি বা আবেগের সংগী সকলে পায় না। মানুষ হিসেবে এইসব বহুমুখী নির্ভরশীলতা পক্ষান্তরে আমাদের ভেতর থেকে ভেংগে দেয়,নিক্ষেপ করে হতাশার এক অন্ধকার পুকুরে । তাই, লড়াইটা হওয়া উচিত একার। তুমি যত বেশী একা,তত বেশী শক্তিশালী। যত বেশী স্বনির্ভর, ততবেশী আত্মবিশ্বাসী। আমরা সকলেই মূলতঃএকা। আবার মহাজগতের সঙ্গে,বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তাই, মোটেই একা নই। আমরা সকলেই মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ। একটি সম্পুর্ন, উজ্বলতর, পরিপূর্ণ,অনন্য এক জীবন। এই বিষয়গুলো বুঝবার জন্য বেশ কিছু পড়াশোনা দরকার। পড়া দরকার ধর্মগ্রন্থ ( সম্ভব হলে সকল ধর্মগ্রন্থ),বিশ্বাস একক হতে পারে, কিন্তু অন্য ধর্মগ্রন্থের মূল দর্শনটি জানতে পারলে বোঝা যেতো মানুষের কল্যাণই সকল ধর্মের আদি তত্ত্ব। তাই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ একটি মূর্খতা ছাড়া কিছুই না।
সচেতন থাকো,জগতের ছোট খাটো দুঃখ, কষ্ট যেন তোমাকে ভেংগে না ফেলে। যেমন শুন্য হাতে এসেছিলে, যাত্রার দিনটিতেও শুন্য হাতে ফিরতে হবে। মজার ব্যাপার হলো, সেই মহা যাত্রার দিনটি ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। আমরা সকলে অজ্ঞাতসারে মৃত্যু নামক” লাষ্ট ষ্টেশন” এর যাত্রী হয়ে উঠে পড়েছি সেই ঝম্ ঝমাঝম্ রেলগাড়ীতে।এই যাত্রা হওয়া উচিত তাই তীব্র আনন্দের। মানব কল্যানের ভেতরই আত্মার সেই গহন আনন্দ নিহিত। জয়তু জীবন। মানবতার জয় হোক।
#লেখক : বিশিষ্ট সাহিত্যিক, কবি ও সঙ্গীত শিল্পী।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”
- » ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন